জীবন বাবু,
তোমার কবিতা পড়তে ভালোই লাগে জানো !
তবে সেই কবিতারা বোধ হয়, ঠিক আমার জন্য নয়।
আমি কোন বনলতা নীরা নই,
পিঠ ছাপিয়ে ঘন কালো চুল নেই।
নেই কৃষ্ণকলি বা সুরঞ্জনার লাবণ্য,
নেই অসাধারণ কোন কিছু, নই অনন্য।
আমার হাতের রান্না এমন সুস্বাদু নয় যে,
কেউ চেখে বলবে, এই না হলে বাঙালি মেয়ে !
মারকশীটে এমন কোন সংখ্যা নেই যে
শিক্ষক শিক্ষিকার প্রিয় ছাত্রীর তকমা আমার হবে।
আমার কথাবার্তায় নারীসুলভ কোনো নমনীয়তা নেই,
নেই কোন সুরেলা কোকিলা কন্ঠ,
নামাজটা সময়মত পড়ে নিলেও
মুসলমান ঘরের ভদ্র মেয়ের ছাপ টা নয় স্পষ্ট।
মা বাবা এক কথায় বলতে পারবেন না
আমার মেয়ের তুলনা হয় না,
তুমি কিংবা শরত বাবু, কিংবা ঠাকুর মশাই এর লেখায়
আমার জায়গা হবে না।
শাড়ির মত কুর্তা জিনসেও বেশ স্বচ্ছন্দ আমি,
তবে আহামরি সাজ, খোঁপা গহনা ভালো লাগে না আমার,
দিনে সাত আটবার গরম চা খেতে খেতে
ঠোঁটে কালো দাগ আর ভাজ পড়ে গেছে,
আলুথালু কিছু উশকু খুশকু চুল ঘাড়ের ওপর ফেলে রাখি।
গাট্টাগোট্টা গড়ন, চোখের ওপর মোটা গ্লাসের চশমা,
খুব সাধারনের মধ্যেও মোটামুটি মেয়ে আমি।
তবে আমিও ভুল করে কখনো তোমার মত কোনো কবিকে ভালবাসতে চাই,
গড্ডলিকায় মাঝে মাঝে কবিপ্রেমে হালকা করে ডুবও দিয়ে দেই।
আমারো কখনো কখনো শেষ বিকেলে চোখ ভিজিয়ে কান্না আসে,
আমিও প্রিয়জনদের বাহবায় হঠাত খুশি হয়ে যাই,
সবকটা দাঁত বের করে হাসতে আমারো ভাল লাগে।
আমারো অনেক স্বপ্ন ইচ্ছে জাগে,
প্রেমিকের সাথে সাইকেল চালিয়ে শহরের পিচের রাস্তায় ভোরবেলা ছুটে চলি,
কিংবা পাহাড়ের ওপর চা খেতে খেতে বান্ধবীর সাথে বসে আকাশ দেখি।
সমুদ্রের পাশে চুপ চাপ একা একা বসে দীর্ঘশ্বাস আর ঢেউ এর শব্দ শুনি।
আমারো ভাল লাগে এক মগ কফি সাথে কোনো সিনেমা বা বইয়ে বুদ হয়ে যেতে।
আমার শারলক, ফেলুদা, শঙ্কু পছন্দ বলে ভেবো না যে
আমি রবীন্দ্র, বিভূতি বা মানিক পড়ি না,
খ্রিস্টোফার নোলানের মত, বা তার চেয়েও বেশি
আমি সত্যজিতের ভক্ত।
তোমার কবিতার পাশে আমার জন কীটসের লেখাও ভাল লাগে।
রবি সোম ক্লাসিকাল মিউজিক শোনা হলে,
মঙ্গল বুধ মাঝরাতে হেডফোনে বাদশা বা নেহা কাক্কার ছেড়ে নাচতেও দারুণ লাগে আমার।
মাঝে মাঝে রঙ তুলি নিয়ে আঁচড় কাটতে আমারো ভাল লাগে,
মাঝে মাঝে হঠাত টানা দু তিনদিন ঘুম ছাড়া কিছু বুঝিই না।
আমারো মাঝে মাঝে ভীষণ রাগ হয়,
আমার মনেও গভীর রাতে কোনো এক দুঃখবোধ বা হতাশা জেগে উঠে।
আমারো ইচ্ছে হয় কামরাটাকে রঙ দিয়ে ছবি দিয়ে সাজিয়ে নেই,
আমারো মনে হয় মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি।
মার্শাল আর্ট শেখার মত কত্থক শিখতেও আমার ভীষণ ইচ্ছে হয়।
আমারো মনে হয়, ইশ,
একটা কবিতা তো তুমি লিখতেই পারতে আমাকে নিয়ে।
কেননা তোমার কবিতা পড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগে জানো!
আমি এক ভীষণ অস্থির নিরুদ্দেশ কোনো মেয়ে,
তোমার কবিতারা তাই আমার জন্য নয়।
….. পূর্বাশা , রাজশাহী, ১৭.০২.২০২১
![](https://powerpurbasha.home.blog/wp-content/uploads/2021/02/poetry-quotes-1680x1120-1.jpg?w=1024)
গল্পমেঘ
আমাদের গল্পগুলো মেঘের মত,
উড়তে থাকে নাম ঠিকানা ছন্দ ছাড়া।
গল্পগুলো মাঝে মাঝে শরত আকাশ ,
সাদা তুলোর পেঁজা যেমন খুব হেসে যায়,
আবার যেন কোন শ্রাবণের কালো ছায়া,
অবিরাম বৃষ্টিতে কারো পথ ভেসে যায়।
আকাশ দেখার বায়না করে গল্প শুনি,
মেঘেরা হঠাৎ যেন থমকে দাঁড়ায়,
প্রখর রোদের খুব উত্তাপের এক সময়ে,
না দেখা মেঘগুলো সব কোথায় হারায়!